ভরসার হাত ( রোমান্টিক ভালোবাসা )

রোমান্টিক ভালোবাসা

রোমান্টিক ভালোবাসা Romantic valobasha

রাতে খাবার পর টেবিলে সবাইকে বসে থাকতে দেখে মোমিন সাহেব ছেলে মেয়ে তিন জনের দিকে তাকিয়ে মেয়ের উদ্দেশ্য একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলে

– এখানে একটা ছবি আর ছবির মালিকের পুরো পরিচয় দেওয়া আছে দেখে বলো ছেলেটা কেমন,,

মোমিন সাহেবের মেয়ে মেঘা ভারী আশ্চর্য হয়ে বলে

এসব কি বাবা! আমার এখনো পড়া শেষ হয়নি তা ছাড়া অপরিচিত একজনকে আমি বিয়ে করতে পারবো না কেমন না কেমন হবে। পরে দেখা যাবে আমার আর পড়াশোনায় হবে না।

মোমিন সাহেব শান্ত স্বরে বলেন

– প্রথমত, তোমার পড়া নিয়ে ছেলে বা ছেলের পরিবার কিছু বলবে না সে ব্যাপারে আমার কথা হইছে তুমি পড়তে চাইলে ওরা না করবে না।

দ্বিতীয়ত, অপরিচিত হলে বিয়ে করা যায় না এ কথা তোমায় কে বলছে?

মেঘা মুখ নিচু করে বলে

– অপরিচিত কারোর সাথে বিয়ে হলে সে বিয়ে বেশিদিন টিকে না কারণ তাদের মাঝে ভালো বন্ডিং তৈরি হয় না পরিচিত হলে সে ভয় থাকে না।

মোমিন সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মেয়েকে বলেন

– আচ্ছা,, তুমি কয়জন দেখছো এরকম? খুঁজে দেখো পরিচিতি অনেকেরই সংসার বেশি দিন টিকে না বেশি বন্ডিং থাকলে সেখানেও সমস্যা।

রোমান্টিক ভালোবাসা

পরিচিত অপরিচিত সব সম্পর্কে বন্ডিং থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই বন্ডিং নিজে থেকে তৈরি করতে হয়।

মেয়েকে অবাক হয়ে তাকাতে দেখে মোমিন সাহেব

ছেলে মেয়ে তিনজনে উদ্দেশ্য বলে

– তোমাদের কে আজকে একটা সত্যি ঘটনা বলি যেটা তোমরা কেউ জানো না কিন্তু যাদের কথা বলবো তারা তোমাদের খুব আপনজন।

ছেলে-মেয়ে তিনজনকে আগ্রহ নিয়ে তাকাতে দেখে মোমিন সাহেব বলতে শুরু করেন

,, তখন ১৯৯৪ সাল ছেলেটা অনেক মেধাবী ছিল, ইচ্ছা ভালো একটা কলেজের প্রফেসর হবে।

কিন্তু দরিদ্র বাবার পক্ষে ছেলেটার পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না তাই ছেলেটা লজিং থাকতে শুরু করে।

লজিংয়ে থেকে অনার্স ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত পড়া চালিয়ে যায়। কয়েক দিন পর ফাইনাল পরীক্ষা তাই ছেলেটা পুরো দমে পড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যে খবর আসে ছেলেটার বাবা ছেলেটাকে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছে তখন যোগাযোগের ব্যবস্তা ছিলো না এখনকার সময়ের মতো।

ছেলেটা তড়িঘড়ি করে বাড়িতে এসে জানতে পারে ছেলেটার বাবা তার পুরনো বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করছে।

বাবা ভাবলো ছেলেটাকে বিয়ে করিয়ে দিলে সংসারে মন দিবে পড়ালেখার প্রতি আর ঝোঁক থাকবে না। রোমান্টিক ভালোবাসা

কিন্তু ছেলেটা বাবার কথা শুনে বেঁকে বসে পড়ালেখার কথা বলে ছেলেটার স্বপ্নের কথা বলে।

আরও বলে মেয়েটাকে সে কখনো দেখেনি মেয়ে ভালো হবে না কেমন হবে এ বিয়ে ও করতে পারবে না।

তখন ছেলেটার বাবা বলে তুই যদি না বলিস আমার মানসম্মান কিছু থাকবে না আমি আমার বন্ধুকে কথা দিয়েছি। তার চেয়ে বড় কথা হলো আমি ওর কাছ থেকে অনেক টাকা ঋণ করে ফেলছি।

আমার ধারা সম্ভব নয় টাকা গুলো ফিরিয়ে দেওয়া। তুই না করিস না মেয়েটা অনেক ভালো।

ছেলেটা তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে একদিকে নিজের স্বপ্ন আরেকদিকে বাবার মান সম্মান তারপর ছেলেটা ভাবল একটা রিক্স নিয়ে দেখি কি হয়।

রোমান্টিক ভালোবাসা

ছেলেটার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার আগের দিনই ছেলেটা বিয়ে হয় মেয়েটার সাথে।

রাতে ছেলেটা অনেক সাহস সঞ্চয় করে মেয়েটাকে সবকিছু খুলে বলে।

আরও বলে কালকে ওর পরীক্ষা ওকে যেন অনুমতি দেয় তাহলে ছেলেটা পরীক্ষা দিতে পারবে।

ছেলেটা মেয়েটাকে ভরসা দেয় যে ও আবার ফিরে আসবে এর মধ্যে যেনো সব কিছু সামলে নেই মেয়েটাও ছেলেটাকে বিশ্বাস করে অনুমতি দেয়।

আর বলে আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো আশা করি আপনি আমার অপেক্ষার দাম দিবেন।

ছেলেটা ও কথা দেয় আর সকাল হওয়ার আগে বের হয়ে যায়। যেখানে লজিং থাকতো সেখানে।

– তারপর কি হইছে বাবা

মোমিন সাহেব এতোক্ষণ কথা বলাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাই পানি খাওয়ার জন্য থামেন তার মধ্যে মেঘা চিন্তিত মুখ বাবাকে জিজ্ঞেস করে।

মোমিন সাহেব পানি খেয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবার বলতে থাকেন।

,, তারপর ছেলেটা সব বিষয় পরীক্ষা শেষ করে ভয়ে ভয়ে বাড়িতে আসেন প্রায় ১৭ দিন পর ।

বাড়িতে এসে শুনেন ছেলেটা চলে যাওয়ার পরেদিন সকালে ছেলেটার বাবা এবং আত্মীয় স্বজনরা মেয়েটাকে বকাবকি করেন মেয়েটার বাবাও না-কি মেয়েটাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ।

কিন্তু মেয়েটা কারোর কথায় কোনো প্রতিউওর করেনি শুধু একটাই কথা বলছে আমার বিশ্বাস উনি আসবেন উনি আমাকে কথা দিয়েছেন।

আমি উনার চোখে কোন ছলনা দেখেনি,, আমিও কথা দিয়েছি আমি ওনার জন্য অপেক্ষা করবো।

সেদিন মেয়েটি ছেলেটাকে দেখে সে কি কান্না ছেলেটা সেদিন ওর কান্না দেখে নিজের মনে নিজে কথা দিয়েছে মেয়েটাকে কখনো কষ্ট পেতে দিবে না সব সময় আগলে রাখবে।

ভালোবাসার পূর্ণতা SHORT LOVE STORY

রোমান্টিক ভালোবাসা

এরপর ছেলেটাকে আরও কঠিন দিন পার করতে হইছে একদিকে সংসার অন্য দিকে পড়ালেখার চালিয়ে যাওয়া। তার উপর বাবা যে টাকা নিয়েছে বন্ধুর কাছ থেকে সে টাকা ফিরিয়ে দেয়া।

একসময় সফলও হয় ছেলেটা ভালো একটা কলেজে প্রফেসর হয়।

আর তা সম্ভব হইছে মেয়েটা পাশে ছিলো বলে সব সময় সাহস, ভরসা দিয়েছে বলে।

মোনিন সাহেব ছেলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে

– এখন তোরা বল মেয়েটা আর ছেলেটা তো একেবারে অপরিচিত ছিলো তাহলে এক রাতে তাদের মাঝে এতো ভালো বন্ডিং কি করে হলো?

এসব কিছু একটাই মানে বিশ্বাস,, বিশ্বাস থাকলে একটা ভরসার হাত থাকলে সব কিছু করা সম্ভব।

মোমিন সাহেবের ছোট ছেলে বিজ্ঞের মতো বলে

– এখন আমি বলি সে ছেলেটা আর মেয়েটা কে ছিলো।

ছেলের কথা শুনে মোমিন সাহেব আর ওনার স্ত্রী মিটিমিটি হাসতে থাকেন।

বড় ছেলে ছোট ভাইয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলে

– তোকে আর বলতে হবে না শেষ দিকে এসে আমরাও বুঝতে পারছি ওনারা কারা ছিলো।

ভাইদের কথা শুনে মেঘা বাবা আর মায়ের পিছনে গিয়ে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে বলে

– তারা আর কেউ নয় আমাদের বাবা-মা ছিলো

আসলেই বাবা তুমি ঠিক বলছো বন্ডিং থাকতে হয় না তৈরী করে নিতে হয় যদি একে অন্যর প্রতি বিশ্বাস থাকে, ভালবাসা থাকে।

তোমরা আমাদের বেস্ট বাবা-মা।

~সমাপ্ত~

ভরসার হাত

জিনাত আফরোজ

3 thoughts on “ভরসার হাত ( রোমান্টিক ভালোবাসা )”

Leave a Comment

Verified by MonsterInsights