বাড়িওয়ালার মেয়ে যখন বউ ( Valobasar Golpo )

Valobasar Golpo গেটে ঢুকার সময় সিফাত দেখতে পেল নিচে বাগানে দাঁড়িয়ে বাড়িওয়ালার মেয়ে অর্থি ফোনে ঝগড়া করছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে। সিফাতকে দেখতে পেয়ে চুপ হয়ে গেল। কয়েকদিন যাবত রাতে টিউশন থেকে ফেরার সময় একই ঘটনা লক্ষ্য করছে সে। কিন্তু তাতে মনোযোগ দিয়ে ওর কোনো কাজ নেই তাই সোজা হেটে রুমে চলে আসলো।

কয়েক মাস হলো সিফাত ওর মায়ের সাথে এই বাসায় ভাড়া উঠেছে। বাড়ির মালিক ওদের এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকছে ওরা। সিফাতের বাবা-মা সেপারেটেড। ডিভোর্স হয়নি তাদের কিন্তু তারা একে অপরের থেকে আলাদা থাকে ব্যক্তিগত কোন ভুল বোঝাবুঝির কারণে, যা সিফাত জানে না। সিফাতের বাবা চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে থাকে। মাঝে মাঝে সিফাত বাবার কাছে গিয়েও থাকে।

সিফাত সবে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাশ করেছে। চাকরির জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সে। ওর বাবা মা ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। তাদের সম্পর্কে ভালোবাসা কমে গিয়েছিল নাকি মায়া নাকি দায়িত্ববোধ তা জানা নেই।

সেপারেশনের পরে তারা অন্য কারো সাথে সম্পর্কেও জড়ায় নি। সিফাত ভাবে যে, ‘আব্বু আম্মুর ভুল বুঝাবুঝি কি এতটাই বড় ছিল? অন্তত আমার কথা ভেবে তো তারা একসাথে থাকতে পারতো। VALOBASAR GOLPO

অবশ্য যখন সম্পর্কে ভালোবাসা থাকে না তখন বোধহয় আলাদা হয়ে যাওয়ায় ভালো।’

বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছে সিফাত। ওর মা মিসেস নাজিয়া আহমেদ এসে দাঁড়ালো। বলল,

— তুমি কালকে আমার সাথে অমির বিয়েতে

আসছো না?

— না মা, আমার টিউশনি আছে। আর বিজি

থাকবো। এত আগে আসতে পারছি না। সম্ভব

হলে জাস্ট বিয়ের দিনটা অ্যাটেন্ড করবো।

— দেখো, বারবার বলেছি তোমার টিউশনি

করানোর কোন প্রয়োজন নেই। তুমি যত টাকা

ইচ্ছা আমার কাছ থেকে নিতে পারো। আমি

জব করি। আমার সবকিছু তো তোমার

জন্যই।

— মা প্লিজ, আমরা অলরেডি কথা বলেছি এই

ব্যাপারে।

Valobasar Golpo

ওর মা কোনোরকম তর্কে না জড়িয়ে চলে গেল। সিফাত একজেদি ছোট থেকেই। সিফাতের বাবা মায়ের টাকার অভাব নেই। কিন্তু সিফাত নিজের ইচ্ছাতে টিউশনি করে।

বরাবরই সিফাত কম কথা বলতে পছন্দ করে। চুপচাপ থাকে। লোকসমাগম, গল্পগুজব এগুলো এড়িয়ে চলে।

সিফাতের মামাতো ভাই অমির বিয়ে তিনদিন পরে। সেই উপলক্ষেই মিসেস নাজিয়া তার ভাইয়ের বাড়ি যাচ্ছে। সকালে যাওয়ার আগে সিফাতকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে গেল ওর মা।

যে কোনো দরকারে বাড়িওয়ালা আন্টির হেল্প নিতে বলে গেল। ওর মা যখন চলে যায় ও তখন ঘুমাচ্ছে।

দুদিন হলো মিসেস নাজিয়া বিয়েতে গেছেন। বাড়িওয়ালা আন্টি এসে মাঝেমাঝে সিফাতের খোঁজ নিয়ে যায়। একদিন এসে ওকে ডিনারে ইনভাইট করে গেল। কিন্তু আসতে লেট হওয়ার অজুহাত দিয়ে সিফাত যেতে পারবে না বলে দিল।

রাতে রুমে এসে সিফাত দেখল টেবিলে অনেক খাবার রাখা। সে বুঝতে পারলো আন্টিই এসব রেখে গেছে। কিছু খাবার খেয়ে বাকিটা ফ্রিজে উঠিয়ে রাখল। সিফাত সাধারণত ঘুম থেকে দেরি করে উঠে। দুপুর বারোটায় সকালের নাস্তা সেরে ভদ্রতার খাতিরে প্লেট, বাটিগুলো ধুয়ে আন্টির কাছে দিতে গেল।

গিয়ে সে দরজায় নক করল, কয়েকবার আন্টিকে ডাকলো কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। দরজা খোলা ছিল তাই ঢুকে ডাইনিং এ প্লেটগুলো রাখলো। চলে আসতেই অর্থির ঘর থেকে বমি করার আওয়াজ পেল সে।

সিফাত সেটাকে ইগনোর করে চলে এসেছিল। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় পাঁচ মিনিট পরে আবার ব্যাক গেল ওর কাছে।

বাড়িওয়ালার মেয়ে যখন বউ

“অর্থি? তুমি ঠিক আছো?”, বলে সিফাত দরজায় নক করলো কয়েকবার। অর্থি কোনো সাড়া দিল না। দরজা ভেতর থেকে লক করা। কিছুটা সন্দেহজনক লাগছিল সিফাতের। কিছুক্ষণ লক ট্রাই করার পরে জোরে একটা টান দিল সে। লকের প্যাঁচ কেটে দরজা খুলে গেল।

রুমে ঢুকে দেখল অর্থি মেঝেতে পড়ে আছে। মুখে ফেনা লেগে আছে। সিফাতের বুঝতে বাকি রইলো না অর্থি বিষ খেয়েছে। ওকে কয়েকবার ঝাঁকালো সিফাত। পালস চেক করে দেখলো বেঁচে আছে।

তাই দ্রুত এম্বুলেন্সকে ফোন দিল। এই ফাঁকে নিজের মা কে ফোন দিয়ে বলল,

— আম্মু, রিতা আন্টির নাম্বারটা আমাকে একটু

মেসেজ করো তো এক্ষুনি।

— করতেছি। কোনো সমস্যা?

— না তেমন কিছু না, তুমি নাম্বারটা পাঠাও।

— আজকেও আসবা না? বলেছিলা বিয়ের দিন

আসবো। অমি তো মন খারাপ করতেছে।

— মা, আমি বিজি। পরে কথা বলছি।

এম্বুলেন্স চলে এসেছে। সিফাত অর্থিকে কোলে করে এম্বুলেন্সে তুলল। জীবনে যার সাথে কথা পর্যন্ত বলেনি তার জন্য আজ কি কি যে করতে হচ্ছে ভাবতেই সিফাতের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

এম্বুলেন্সে বসে সিফাত ভাবছে, ‘এই মেয়ে নিশ্চয়ই বয়ফ্রেন্ডের জন্য এই কান্ড ঘটিয়েছে। এসব মেয়েরা ভাবে কি, মরে গেলেই ভালোবাসা পেয়ে যাবে?’

Valobasar Golpo

অর্থিকে হসপিটালে ভর্তি করেছে সিফাত। ওর অবস্থা খুব খারাপ। মেসেজ থেকে নম্বরটা নিয়ে অর্থির মাকে ফোন দিল সিফাত,

— আন্টি, সিফাত বলছি।

— হ্যা বাবা, বলো।

— কোথায় আপনি এখন?

— আমি তো তোমার আংকেলের সাথে একটু

ব্যাংকে এসেছি। কিছু কি লাগবে তোমার?

অর্থি বাসায় আছে ওকে বলো।

— আন্টি, অর্থি বিষ খেয়েছে। ওর অবস্থা খুব

খারাপ। আমি ওকে হসপিটালে ভর্তি করেছি।

— কি?

— এতকিছু বলার সময় নেই। ইমিডিয়েটলি চলে

আসুন।

অর্থির মা তাড়াহুড়া করে ফোন কেটে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সিফাত বারান্দায় পাইচারি করছে। খুব টেনশন হচ্ছে ওর।

পনেরো মিনিটের মধ্যে অর্থির বাবা মা চলে আসলো। উনারা আসার পরে উনাদের সব ডিটেইলস বলল সিফাত। অর্থি বেঁচে গেছে ভাগ্যের জোরে। এত ক্রিটিকাল কন্ডিশনে বাঁচা মুশকিল। আরো কয়েকদিন হসপিটালে থাকতে হবে। সিফাত পরে ওর মা কে সব জানালো। এসব শুনে ওর মা ও বাসায় চলে এলো। VALOBASAR GOLPO

গত মাসে একটা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিল সিফাত। সিলেক্টেড হয়েছে। পরের মাসে জয়েনিং। ওর বাবা বারবার ফোন করে বলছে চট্টগ্রাম যেতে। কয়েকমাস হলো বাবার সাথে দেখা নেই সিফাতের। এক সপ্তাহ ছুটি কাটানোর জন্য বাবার কাছে চলে গেল সিফাত। রাতে বাবার সাথে ডিনার করতে বসেছে সে। খেতে খেতে তার বাবা জিজ্ঞেস করলো,

— তারপর কি অবস্থা বলো।

— আমি ঠিক আছি।

— কেমন চলছে ঐদিকে সবকিছু?

— ভালো।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নিচু করে খেতে খেতে সিফাত বললো,

— তুমি কি মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছো?

ওর বাবা চুপ করে থাকল। সিফাত ও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে গেল। সিফাতের বাবা অফিস ছুটি নিয়েছে ওর সাথে সময় কাটানোর জন্য। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগছে ওর। অন্যবার এলে বাবা অফিসে ব্যস্ত থাকে। ওকে একাই ঘুরে ফিরে বিদায় নিতে হয়। এবার বাবার সাথে অনেক জায়গায় ঘুরেছে সে। অনেক গল্প, আড্ডা, হাসি ঠাট্টা সব মিলিয়ে সিফাতের এবারের ট্রিপটা ভালো কেটেছে।

রাতের বাসে বাসায় ফিরেছে সিফাত। ওর মা একপ্রকার চটে আছে। এক সপ্তাহ বলে পনেরো দিন বাবার কাছে থেকে এসেছে সিফাত। এসে সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে সে। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরছিল সিফাত, তখন দেখতে পেল বাগানে দোলনায় বসে আছে অর্থি। সিফাতকে দেখে অর্থি জিজ্ঞেস করলো,

— কখন এসেছেন?

কিছুটা চমকে উঠল সিফাত। ছোট করে উত্তর দিল,

— গত রাতে।

তারপরে সিফাত ভেতরে চলে যাচ্ছিল কিন্তু অর্থি পেছন থেকে ডেকে বলল,

— এখানে একটু বসুন না?

সিফাত ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসল। দুজনেই চুপ করে আছে। তাই সিফাত কথা আগানোর জন্য বলল,

— বিষের টেস্ট কেমন ছিল?

— খোঁচা দেওয়ার জন্য আমাকে বাঁচিয়েছেন?

— না, জিজ্ঞেস করছি। সব জিনিসের স্বাদ জেনে

রাখা ভালো।

— আপনি নাই বা জানলেন বিষের স্বাদ।

আপনাকে যেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না

হয়।

সিফাত কি বলবে বুঝতে পারছিল না। তাই বলল,

— অসুস্থ মানুষ ভেতরে গিয়ে বসুন। বাইরে ঠান্ডা

বাতাস।

বলেই সিফাত ভেতরে চলে গেল। অর্থিকে বলার মতো কিছুই ছিল না ওর। অর্থিরও আবার পিছু ডাকার সাহস ছিল না।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো সিফাত। এটা তার প্রতিদিনের নিয়ম। অর্থি এখনো বাগানে বসে আছে। হাত দিয়ে চোখ মুছে ফেলছে অর্থি। হয়তো কাঁদছিল। সিফাত মনে মনে ভাবলো, ‘এভাবে চলে আসাটা ঠিক হয় নি। আর এভাবে ঠাট্টা করাটাও উচিত হয়নি।’

সিফাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ অর্থিকে দেখছিল। কিছুক্ষণ পরে অর্থি উঠে ভেতরে চলে গেল।

ভালোবাসার গল্প

পরেরদির সিফাত ওর মাকে সঙ্গে নিয়ে অর্থিদের ফ্ল্যাটে গেল। সিফাতকে দেখে অর্থির মা বললো,

— তুমি তাহলে ফাইনালি এসেছো?

— জ্বী আন্টি। বাবা অনেকদিন থেকেই জোর

করছিল যাওয়ার জন্য। তাই ছুটি কাটিয়ে

এলাম।

— চাকরি পেয়েছো শুনলাম। আলহামদুলিল্লাহ,

বাবা। আসলে পরিস্থিতি এত বাজে ছিল যে

তোমার সাথে পরে কথা বলা হয়ে উঠে নি।

তোমার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নাই

তুমি না থাকলে আমার একমাত্র মেয়েটাকে

হারিয়ে ফেলতাম।

— এইভাবে বলবেন না আন্টি। আমি আপনাদের

ছেলের মতো।

অর্থির বাবা মা আর অর্থিকে পরের দিন লাঞ্চের জন্য ইনভাইট করে এলো সিফাত। চাকরি পাওয়া উপলক্ষে দাওয়াত।

পরের দিন অর্থি বাবা মায়ের সাথে সিফাতদের বাসায় আসলো। দুপুরের খাওয়া শেষে অর্থি সবগুলো রুম ঘুরে দেখছে কিভাবে সাজিয়েছে এরা। সিফাতের রুমে ঢুকে বুকশেলফের বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিল অর্থি। হঠাৎ সিফাত রুমে ঢুকে অর্থিকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। অর্থিও উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— সরি, আসলে আমার পারমিশন নেওয়া উচিত

ছিল।

— ইটস ওকে।

অর্থি বের হয়ে যেতেই সিফাত জিজ্ঞেস করল,

— ফ্রি থাকলে বিকেলে ঘুরতে যাবেন?

— আপনি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন? বেশ

অবাক হচ্ছি।

— এইটা কি আমার প্রশ্নের উত্তর?

অর্থি মুচকি হেসে বলল,

— আমি রেডি থাকবো। আর হ্যা, আমাকে তুমি

করে বলতে পারেন।

বলে অর্থি রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

বিকেলে রেডি হতে হতে সিফাত অর্থিকে ফোন দিল,

— রেডি তুমি?

— জ্বী, আপনার জন্য ওয়েট করছি।

— বাসায় বলছো?

— হ্যা।

অর্থি গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। ওকে বেশ সুন্দর লাগছে। ওকে সবসময়ই ভালো লাগে সিফাতের। যদিও এখন একটু শুকিয়ে গেছে। প্রথম যখন ওকে দেখেছিল সিফাত তখন থেকেই ওকে পছন্দ করে। পছন্দটা কেমন ঠিক জানেনা সিফাত।

Valobasar Golpo

বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে নিল সিফাত আর অর্থি। অর্থি জিজ্ঞেস করলো,

— কোথায় যাচ্ছি আমরা?

— একটা প্লেস আছে যেখানে আমি মাঝেমাঝে

একা বসে থাকি।

— স্পেশাল প্লেস?

— কিছুটা। ঐখানে ছোট্ট লেকের পাশের ভিউ

অনেক সুন্দর। তার পাশ দিয়ে একটা সুন্দর

রাস্তা চলে গেছে। শান্ত রাস্তা। হাটতে ভালো

লাগে। যাকে বলে নির্জন পরিবেশ। লোকজন

কম।

অর্থি সিফাতের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছিল। সিফাত ওর দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে গেল। অর্থিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিফাত জিজ্ঞেস করলো,

— কি?

অর্থি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল।

অর্থিকে সঙ্গে নিয়ে লেকের পাশের রাস্তায় হাটছে সিফাত। সবকিছু বিশ্লেষণ করে অর্থিকে চেনাচ্ছে। অর্থি পরিবেশের চেয়ে বেশি সিফাতকে দেখছে। সিফাতের উৎফুল্লতা দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা তার প্রিয় জায়গা। সিফাত যে এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে জানতো না অর্থি। VALOBASAR GOLPO

রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেইসবুক ঘুরছে সিফাত। হঠাৎ অর্থি ফোন দিল। সিফাত এক্সপেক্ট করেনি অর্থি ফোন দিতে পারে। রিসিভ করতেই অর্থি বলল,

— থ্যাংক ইউ। এত সুন্দর একটা প্লেসে ঘুরতে

নিয়ে যাওয়ার জন্য।

— মাই প্লেজার।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে অর্থি বলল,

— আপনার জানতে ইচ্ছা করেনা, কেন আমি

সুইসাইড অ্যাটেম্প্ট করেছিলাম?

— না।

— ওহ্। অবশ্য এমন ফালতু ব্যাপারে কারো

ইন্টারেস্ট না থাকারই কথা। আর ছেলেটা

যখন আপনি…

বলেই অর্থি থেমে গেল। শুনে সিফাত বলল,

— তোমার বয়ফ্রেন্ড যে ফ্রড এটা আমি

জানতাম। কখনো বলার সাহস হয়নি। তবে

বলে দিলে হয়তো এইরকম সিচুয়েশন হতো

না বা এর চেয়েও খারাপ হতে পারতো।

বাড়িওয়ালার মেয়ে যখন বউ

— আমাকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ।

— বাদ দাও। কি করতেছো?

— তেমন কিছু না। আপনি?

— শুয়ে আছি।

— ছাদে আসবেন?

— কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।

— তা অবশ্য ঠিক। সকালে হাটতে বের হয়? গল্প

করা যাবে?

— ওকে ভোরে ফোন দিও বারবার। আমি না

উঠা পর্যন্ত।

অর্থি হেসে বলল,

— আচ্ছা ঠিক আছে।

অনেকবার ফোন দিয়ে অর্থি সিফাতকে জোর করে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। রাস্তায় হাটতে বের হয়েছে দুজনে। সিফাতের চোখ তখনও ঘুম ঘুম। বাড়িওয়ালার মেয়ে যখন বউ

অর্থি বলল,

— জোর করে ওঠানো বোধহয় ঠিক হয়নি।

সিফাত বিড়বিড় করে বলল,

— জোর করে ওঠানোর একটা মানুষ খুব

প্রয়োজন।

— কি বললেন?

— বললাম, জোর করে না উঠালে বারোটাতে

সকাল হতো।

বলে সিফাত হাসলো।

সিফাতের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে অর্থির। কিন্তু সিফাত অর্থিকে ভালোবেসে ফেলেছে। খুব সম্ভবত অর্থিও। কিন্তু সিফাত অস্বীকৃতি পাওয়ার ভয়ে বলতে পারছে না। ভেতবে ভেতরে সে অস্থির অনুভব করছে। দুবেলা অর্থিকে সময় দেওয়া হয় কিন্তু সিফাত মনের কথাটা বলতে পারছে না। সন্ধ্যায় মনের সাথে যুদ্ধ করে সাহস যুগিয়ে সিফাত অর্থিকে ফোন দিল। অর্থি রিসিভ করতেই সিফাত বলল,

— ছাদে এসো।

অর্থি হয়তো এমন একটা ফোনের আশায় ছিল। সিফাতের ফোন পেয়ে অর্থি খুশি হয়ে বলল,

— পাঁচ মিনিট সময় দিন।

এই ফাঁকে অর্থি চোখে একটু কাজল দিয়ে নিল। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। চুলগুলো আঁচড়ে খোলাচুলে ছাদে চলে গেল।

সিফাত অস্থির হয়ে অপেক্ষা করছে। এপাশ ওপাশ করছে। অর্থিকে আসতে দেখে সিফাত একটু অবাক হলো। অর্থি সেজে এসেছে দেখে সিফাত চোখ সরাতে পারছে না। চশমা পরে যে এতটা অপলক তাকিয়ে আছে সিফাত তা অর্থির বুঝার কথা নয় এই সামান্য আলোয়। চশমা পরার এই এক সুবিধা। অর্থি এসে সিফাতের পাশে দাঁড়ালো। পুরো শহরটা আলোয় ছেয়ে আছে।

বাড়িওয়ালার মেয়ে যখন বউ

সিফাত কিছু বলুক সেই অপেক্ষায় অর্থি পাগল হয়ে যাচ্ছে। সব অপেক্ষা শেষে সিফাত বলতে শুরু করলো,

— তোমাকে কিছু বলতে চাই।

— জ্বী বলুন।

— জানি না তুমি ব্যাপারটা কিভাবে নেবে।

— বলুন না। আমি হয়তো সেই কথাটা শোনার

জন্যই অপেক্ষা করছি।

সিফাত কিছুক্ষণ অর্থির দিকে তাকিয়ে থেকে বলে ফেলল,

— আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।

অর্থি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। অন্যদিকে ঘুরে সে বলল,

— সবটা জেনেও কেন?

— আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ

করি। যখন তোমাকে প্রথম দেখি তখন

থেকেই।

অর্থি চুপ করে আছে দেখে সিফাত নিরাশভাবে বলল,

— তোমার আমাকে পছন্দ নাও হতে পারে।

আই’ম জাস্ট সেইং…

ফরগেট ইট। নিচে যাও।

বলে তাড়াহুড়া করে সিফাত নিচে চলে এলো। এসে রুম লক করে শুয়ে থাকলো। অর্থির চুপ করে থাকাটা সিফাতকে আশাহত করেছে।

সকাল সকাল সিফাতের দরজায় বারবার নক করছে অর্থি। সিফাত বিরক্ত হয়ে চোখ মুছতে মুছতে উঠে দরজা খুললো। অর্থি সোজা রুমে ঢুকে গেল। গিয়ে সিফাতের বিছানায় বসলো। VALOBASAR GOLPO

সিফাত জিজ্ঞেস করলো,

— তুমি এখানে?

— কেউ একজন সেদিন বিড়বিড় করে বলেছিল

তাকে জোর করে ঘুম থেকে তোলার একটা

মানুষ দরকার। আজ এক তারিখ। আপনার

জয়েনিং।

— ওহ্। আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম। থ্যাংক

ইউ।

বলে তাড়াহুড়া করে সিফাত ফ্রেশ হয়ে এলো। কোন শার্ট পরবে না পরবে ঠিক করতে লাগলো। অর্থি একটা শার্ট ধরিয়ে দিয়ে বলল,

— এটা ভালো লাগবে।

শার্ট হাতে নিয়ে সিফাত বলল,

— ম্যাম, আপনি কি একটু রুমের বাইরে যাবেন?

আই হ্যাভ টু চেঞ্জ মাই ক্লথ।

অর্থি লজ্জা পেয়ে বাইরে চলে গেল।

অফিসে সবকিছু সিফাতের পছন্দ হয়েছে। প্রথমদিন তেমন কোন প্রবলেম হয় নি। রুমে এসে দেখলো এলোমেলো রুম খুব সুন্দর করে সাজানো। সিফাত চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখলো।

তারপরে তার মাকে ডেকে বলল,

— আম্মু রুমের এই অবস্থা কে করলো?

— আমার বউমা।

— বউমা মানে?

— তুমিই ভালো জানো।

বাড়িওয়ালার মেয়ে যখন বউ VALOBASAR GOLPO

বলে মিসেস নাজিয়া হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। সিফাত বুঝতে পারলো অর্থি এগুলো করেছে। তাই চেঞ্জ না করেই ডাইরেক্ট অর্থিদের ফ্ল্যাটে চলে গেল। অর্থি রুমে বসে গুনগুন করছিল। সিফাতকে দেখে অর্থির মা বলল,

— এসো বাবা। তুমি নিশ্চয়ই আপার কাছে সব

শুনেছো। তোমার কি আমার মেয়েটাকে

পছন্দ বাবা? আমাদের কোন জোর নেই। তুমি

যা চাও তাই হবে।

সিফাত পুরোপুরি না শুনে লজ্জামুখে বলল,

— আন্টি আমার অর্থিকে পছন্দ।

মিসেস রিতা খুশি হয়ে গেলেন। সিফাত অর্থির রুমের কাছে গিয়ে কোন কথা না বলে শুধু নক করলো। অর্থি বলল,

— কাম ইন।

সিফাত মুখে কিছু না জানার ভাব এনে বলল,

— এসব কি?

— কোনসব?

— বাড়ির সবাই কিভাবে জানলো?

অর্থি লজ্জায় রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সিফাত ওর হাত ধরে ফেলল। অর্থি বলল,

— আমি বাড়িতে বলেছি আমাদের বিয়ের কথা।

আমি বলেছি আমি আপনাকে পছন্দ করি।

— ওয়াও। বলার কথা ছিল আমার। টু ফাস্ট।

— হাত ছাড়ুন। আপনার বিয়ে করতে হবে না।

— হাত যখন একবার ধরেছি ছাড়তে পারবো না।

পারলে ছাড়িয়ে নাও।

অর্থি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।

অতঃপর সিফাতের সাথে অর্থির বিয়ে সম্পন্ন হলো। অবাক করার বিষয় বিয়েটা হয়েছে চট্টগ্রামে সিফাতের বাবার বাড়ি থেকে। তাও মিসেস নাজিয়ার ইচ্ছায়। সিফাত শুনে বেশ অবাক হয়েছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তার মাথায় সবটা ঢুকেছে। কয়েকবছর পরে হলেও সিফাতের বাবা মা নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য দূর করার তীব্র চেষ্টা করে চলেছে স্বাভাবিক একটা সংসারের বাঁধনে বাধার। সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ সংসার। সিফাতের কাছে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।

(সমাপ্তি)

গল্প: বাঁধন

লেখনীতে– নূর-এ সাবা জান্নাত