অভিমানি ভালোবাসা Part 2

অভিমানি ভালোবাসা
অভিমানি ভালোবাসা অভিমানি ভালোবাসার গল্প

অভিমানি ভালোবাসার গল্প । Bangla Romantic Golpo ।জুহি রেস্টুরেন্ট থেকে গাড়ি করে বাসায় চলে আসে আর ঠিক তখনি রোদের বলা কথা টা শুনে জুহি চমকে উঠে।

-জুহি তুই আমাদের বাসায় আর আমি গতকাল ‌তোকে খুঁজতে বিমান বন্দরে পর্যন্ত গিয়েছিলাম এটা তুই জানিস? (রোদ)

-কে জুহি? (অবাক হয়ে)

-দেখ তোর নাকের ওপর আরেক টা নাক উঠছে। (রোদ)

জুহি রোদের কথা শুনে নাকে হাত দিতেই। রোদ হাহা করে হেসে উঠে।

অভিমানি ভালোবাসা পার্ট ১

-কিরে তোর মনে আছে ছোটবেলায় এই কথাটা যখন আমি তোকে বলতাম তখন তুই ঠিক এই কাজ টাই করতি। এরপর ও যদি মিথ্যা বলছিস না দেখিস তোর এবার সত্যি সত্যি দুইটা নাক উঠবে। (রোদ হেসে হেসে)

-ভাইয়া আপনি জানলেন কিভাবে যে আমি জুহি।

-দেখ জুহি তুই আমাকে ভাইয়া ডাকবি না। আর আমি অফিস থেকে এসে নিজের রুমে যাওয়ার সময় আম্মুরা বলছিলো যে তখন শুনেছি। (রোদ) অভিমানি ভালোবাসা

-কেন ভাইয়া ডাকবো না? আপনি তো আমার ভাইয়া ই তাই না সো আমি ভাইয়া ডাকবো। আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে। যাচ্ছি। (জুহি)

জুহি চলে যেতে নিলে রোদ জুহির হাত ধরে ফেলে। জুহি একবার রোদের চোখের দিকে তাকায় দেখে রোদ ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। জুহি কিছু না বলে ওর হাত টা রোদের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উপরে চলে যায়।

রোদ অফিস থেকে আসার পর যখন শুনেছে ওর বউ সেজে থাকা মেয়েটি আসলে জুহি তখন ওর খুঁশির সীমা ছিলো না। কিন্তুু এখন জুহির মুখে ভাইয়া মার্কা ডাক টা শুনে রোদের কেমন জেনো লাগছে। সকাল পর্যন্ত জুহি যেমন ছিলো তেমন টাই তো ভালো ছিলো। ভাইয়া ডাকার কি দরকার আজব।

রোদের আজকে অফিসে ভালো লাগছিলো না তাই চলে এসেছে বাসায়। জুহি যাওয়ার পর রোদ ও নিজের রুমে চলে যায়।।।

লাঞ্চ টাইম………

-আম্মু তোমরা কিন্তুু এটা ঠিক করো নি। (রোদ)

-কোনটা? (রোদের আম্মু)

-জুহি এসেছে আর তোমরা আমার কাছে সেটা লুকিয়ে রেখেছো। (রোদ)

-দেখ ভাইয়া আমাদের দোষ দিবি না। জুহি আপু ই তো নিষেধ করেছে। (রিমি)

Ovimani Valobasha

-কিরে জুহি কেন নিষেধ করেছিলি? (রোদ)

-বেশ করেছি তুমি ই তো আমাকে চিনতে পারো নি ভাবলাম এই সুযোগে তোমার সাথে একটু মজা করা যাক। হিহি….(জুহি)

-আবার হাসে। কিভাবে চিনবো তুই কি আর আগের সেই পিচ্চি জুহি আছিস নাকি। এখন কওো বড় হয়ে গেছিস। (রোদ)

-হুহ হয়েছে আর বলতে হবে না। (মুখ বাঁকিয়ে)

-জুহি তুই তো নিজের হাতে নাকি খেতে পারিস না সকালের মতো আমি খাইয়ে দেই? (রোদ)

-না ভাইয়া তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি আর না এবার আমি নিজেই খেতে পারবো। (জুহি)

-আরে…..(রোদ)

রিমি ঝিমির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারে জুহি। ওরা তো হাসতে হাসতে শেষ। রোদের মুখ টা দেখার মতো হয়েছে। কি আর করার জুহি যখন আসবে না রোদ নিজেই নিজেকে খাওয়াচ্ছে। অভিমানি ভালোবাসা

পরের দিন সকালে………

-রোদ উঠ আজকে তুই অফিসে যাবি না?.(আম্মু)

-না আম্মু ভালো লাগছে না। আমি ম্যানেজার সাহেব কে সব বুঝিয়ে দিয়েছি। (রোদ)

-ওহ তাহলে নাস্তা করতে আয় সবাই এসে গেছে শুধু তুই ছাড়া। (আম্মু)

-আচ্ছা আম্মু আসছি। (রোদ)

সবাই মিলে নাস্তা করে নেয়। রোদ জুহির পাশে পাশে থাকার চেষ্টা করছে কিন্তুু জুহি রোদ কে ইগনোর করে চলছে। ইগনোর একবার ঠিক আছে। কিন্তুু বারবার মেনে নেওয়া পসিবল না। রোদ ভাবলো জুহি কে জিঙ্গেস করবে এমন কেন করছে সে। পরক্ষণে রোদ তার একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য বাহিরে চলে যায়।

আর এ দিকে জুহি কাব্য রিমি ঝিমি আর শান্ত শুভ্র কে নিয়ে আসতে বিমান বন্দরে যায়। সবাই মিলে একসঙ্গে ইনজয় করছে। রোদ বাসায় আসে।

পুরো বাসা টা খুঁজে জুহি কে পেলো না রোদ।

-আম্মু ও আম্মু কোথায় তোমরা? (রোদ)

-এই তো আসছি…(রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে)

রোদের আম্মু রান্নাঘর ছেড়ে রোদের রুমে আসে।

-কিরে কি হলো? (আম্মু)

-জুহি কোথায়? কোথাও দেখছি না যে? (রোদ)

-দেখবি কিভাবে ওরা তো বাসায় নেই। (আম্মু)

-ওরা বলতে? (রোদ)

-কাব্য রিমি ঝিমি শান্ত জুহি কেউ ই বাসায় নেই। (আম্মু)

-কোথায় গেছে? (রোদ)

Ovimani Valobasha

-ওরা শুভ্র কে বিমান বন্দরে থেকে নিয়ে আসতে গেছে। (আম্মু)

-কিহ শুভ্র দেশে মানে কি? আমাকে একবার জানালো ও না? (রোদ)

-এই চুপ তুই শুভ্র কে দোষ দিচ্ছিস কেন? কালকে রাত থেকে শুভ্র তোকে ৫০ টার উপরে ফোন দিয়েছে। পরে সকালে তোর কোনো খোঁজ না পেয়ে জুহি দের কে পাঠাতে হয়েছে শুভ্র কে নিয়ে আসতে। (আম্মু)

-ও মাই গড। ওপপস ফোন টা অফ হয়ে গেছে চার্জ দিতে ভুলেই গিয়েছিলাম। সরি আম্মু। (রোদ)

-সরি আমাকে না শুভ্র কে বলিস। (আম্মু)

রোদের আম্মু রান্না ঘরে চলে যায়। রোদ নিজের রুমে গিয়ে ফোন টা চার্জে দেয়। একদম বন্ধ হয়ে পড়ে আছে ফোনটা। আজকাল সে কেমন জেনো হয়ে গেছে। সব কিছুই ভুলে যাচ্ছে। মাথায় শুধু জুহি কে নিয়েই সব ভাবনা।

সারাদিন কাটিয়ে শুভ্র রা সন্ধ্যায় বাসায় আসে। সবার আগে কাব্য শান্ত আর রিমি ঝিমি বাসায় ঢুকে।

-কিরে তোদের আসতে এতো দেরি হলো কেন? (রোদ)

-আরে ভাইয়া তুমি তো যাও নি সেই ইনজয় হয়েছে। (কাব্য) অভিমানি ভালোবাসা

-এই তোরা ড্রিঙ্ক করেছিস? (রোদ)

-হুশ আস্তে ভাইয়া আস্তে কেউ শুনে নিলে শেষ।?(রিমি)

-জুহি কোথায়? (রোদ)

-শুভ্র ভাইয়ার সাথে আসছে। (কাব্য)

ওরা চারজন কোনো ভাবে হেলেদুলে নিজেদের রুমে চলে যায়। রোদ একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখে জুহি শুভ্রর সাথে হেসে হেসে কথা বলে আসছে। জুহি পড়ে যেতে নিলে শুভ্র জুহি কে কোলে তুলে নেয়। রোদ এটা দেখে খুব রেগে যায়।

রেগে দাঁত মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে রোদ। রোদের ইচ্ছে করছে শুভ্র কে একটা ঘুষি মারতে। ওর সম্পদে হাত দেওয়ার সাহস কি করে হয় ওর। শুভ্র কে দেখে মনে হচ্ছে সে ড্রিঙ্ক করে নি।

-কি রে রোদ তুই এখানে কখন আসলি। (শুভ্র)

-যখন তুই আমার জিনিসে হাত দিলি তখন এসেছি। (রোদ বিড়বিড় করে)

-কিছু বললি?(শুভ্র)

-না তো। (রোদ)

-দেখ তোকে তো আমি ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো। দাড়া জুহি কে রেখে আসি। (শুভ্র)

Ovimani Valobasha

-তোর ওকে রেখে আসতে হবে না আমাকে দে আমি রেখে আসছি। (রোদ)

জুহির কানে কিছু কিছু কথা যায়। রোদের কথা শুনে জুহি বলে উঠলো।

-আমি যাবো না রোদ ভাইয়ার কোলে। আমি শুভ্র……..

(জুহি)

-দেখ না ভাই ও নিজেই বলেছে যাবে না। আমি রেখে আসছি। (শুভ্র)

রোদ আর কিছু বললো না। শুভ্রর পিছন পিছন গেলো রোদ ও। শুভ্র জুহি কে ওর বেডে শুয়ে দেয়।

-এবার তুই আমাকে বল তোর ফোন কোথায় ছিলো? কওো গুলা ফোন দিয়েছি খেয়াল আছে তোর? (শুভ্র)

-সরি রে আমার ফোন টা অফ হয়ে গিয়েছিলো কখন খেয়াল ই করিনি। (রোদ)

-হয়েছে আর বলতে হবে না। (শুভ্র) অভিমানি ভালোবাসা

-আহা সরি তো যা এখন ফ্রেশ হতে যা। আর তুই এদের ড্রিঙ্ক করতে দিলি কেন? (রোদ)

-আরে আমি এদের কে অনেক বার নিষেধ করেছি কেউ আমার কথা শুনলো ই না। (শুভ্র)

-মেরে নাক ফাটিয়ে দিতি। (রোদ)

-হাহাহা আচ্ছা অার কোনো সময় ড্রিঙ্ক করতে চাইলে মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো। (শুভ্র)

রোদ আর শুভ্র চলে যায়। জুহি শোয়া থেকে উঠে বসে।

-হুহ এখন কেমন লাগছে মি. রোদ চৌধুরী। (জুহি হেসে উঠে। জুহি ড্রিঙ্ক করেই নি। যাছিলো সব রোদ কে দেখানোর জন্য ছিলো)

ডিনার টাইম……..

রোদ আর শুভ্র পাশাপাশি বসেছে।

-কিরে তোদের বাকি ভাই বোন রা কি আজকে ডিনার করবে না? (আম্মু)

-না আম্মু ওরা না খুব ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়েছে। (রোদ)

-মিথ্যা কথা এই দেখো মামনি আমি এসে গেছি। (জুহি)

-ও জুহি তুই এসেছিস। আয় বস। (শুভ্র)

-কিরে শুভ্র ওর নেশা এতো তাড়াতাড়ি কেটে গেলো(রোদ)

-জুহি তো কম খেয়ে ছিলো তাই কেটে গেছে হয়তো। (শুভ্র) অভিমানি ভালোবাসা

-এই তোরা কি বিড়বিড় করছিস? (আম্মু)

-কই কিছু না তো আম্মু। (রোদ)

-হুম তোমাদের বিড়বিড় করা শেষ হলে শুভ্র ভাইয়া এবার আমাকে খাইয়ে দাও। (জুহি)

জুহির কথা শুনে রোদ বলে উঠে।

-তুই না লাঞ্চ করার সময় বলেছিস তুই নিজের হাতে খেতে পারিস? (রোদ)

Ovimani Valobasha

-কই না তো সেটা তো বলেছি তোমাকে আর জ্বালাবো না। (জুহি)

-তাহলে এদিকে আয় আমি খাইয়ে দিচ্ছি। (রোদ)

-না আমি শুভ্র ভাইয়ার হাতে খাবো। (জুহি)

-আহা রোদ এতো করে বলছে যখন শুভ্র ই ওকে খাইয়ে দিক না। (আম্মু)

-আচ্ছা আম্মু। (রোদ)

রোদ জুহির কথা শুনে রেগে আছে। শুভ্র হাতে খাবে কিন্তুু রোদের হাতে খাবে না। রোদের এতো রাগ হচ্ছে যে বলার মতো না। কিন্তুু রোদ প্রকাশ ও করতে পারছে না।

রোদ কোনো ভাবে খেয়ে উঠে। কাউকে কিছু না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রোদের। ভীষণ রকমের রাগ উঠে গেছে। টেবিলের উপরে থাকা কাঁচের ফুলদানি টা সজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে রোদ। আর সাথে ফুলদানি টা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। অভিমানি ভালোবাসা

-ওর আমার হাতে খেতে সমস্যা..! শুভ্রর হাতে খাবে। কেন আমার হাতে খেলে কি হবে? আমার হাতে কি বিষ আছে? (রোদ)

ভাঙ্গচুরের শব্দ শুনে রোদের আম্মু আর রোদের চাচিমা দৌড়ে আসে। রোদের রুমের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ করা।

-রোদ কি হয়েছে বাবা? তোর রুম থেকে কিছু ভাঙ্গার শব্দ পেলাম। (আম্মু)

-কিছু না আম্মু। ঐ ফুলদানি টা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেছে। (রোদ)

-আমি দেখবো তুই দরজা খোল।

-আরে আম্মু কিছু হয় নি তো। তুমি যাও আমি এখন ঘুমাবো। গুড নাইট।

-আরে রোদ শোন……(আম্মু)

রোদ দরজা খুললই না। উল্টো রুমের লাইট অফ করে দেয়। আর রোদ বেলকনিতে চলে যায়।

সারা রাত একটু ও ঘুমায় নি রোদ। চোখ গুলে ফুলে টুকটুকে লাল হয়ে আছে। জুহি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর রিমি ঝিমি রুমে যায়।

-এই যে ছোট আপি রা উঠো। সকাল হয়ে গেছে।

-ওহ আপু আরেক টা ঘুমাই না।

-একদম না। উঠো বলছি নয়তো এখন আমি নিচে গিয়ে মামনি কে সব বলে দেবো।

-কি বলবে? (রিমি ঝিমি দুজনেই লাফিয়ে উঠে বসে)

-তোমরা ড্রিঙ্ক করেছো এটা। (জুহি)

Ovimani Valobasha

-এই আপু এটা ভুলে ও বলবেন না। আব্বু আম্মু রা শেষ করবে আমাদের। (কাব্য)

-তাহলে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে আসো। (জুহি)

-আচ্ছা বাট আপু রাতে কি আমাদের কে ডিনার করার জন্য আম্মু রা ডাকে নি? (রিমি)

-নাহ শুভ্র ভাইয়া বলে দিয়েছে তোমরা ছোট মানুষ সারাদিন ঘুরে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছো তাই আর কিছু বলে নি মামনি। (জুহি)

-ওহ তাহলে বাঁচা গেলো। (কাব্য)

-হয়েছে এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও। (জুহি) অভিমানি ভালোবাসা

-ওক্কে আপু। (কাব্য)

তারপর জুহি রোদের রুমে যায়। জুহি ভেবেছিলো দরজা বন্ধ কিন্তুু নাহ হালকা একটা ধাক্কা দিতে দরজা খুলে গেলো। রুমে ঢুকেই থ হয়ে যায় জুহি। ফুলদানি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।

জুহি ভালোই বুঝতে পেরেছে এটা রোদের কাজ। কিন্তুু কেন এমন করলো সেটাই বুঝতে পারলো না জুহি। তারপর জুহি খুব সাবধানে ফ্লোর থেকে কাঁচের ভাঙ্গা টুকরো গুলো তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

জুহি পুরো রুম খুঁজে দেখে কোথাও রোদের নাম গন্ধ ও নেই।

-সকাল সকাল এই মশাই গেলো টা কোথায়? ফ্লোরে পড়ে আছে ফুলদানির ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো আর রুমে উনি নেই? আশ্চর্য! (মনে মনে)

জুহি বেলকনিতে গিয়ে দেখে রোদ ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় রোদ কে বেশ মায়াবি লাগছে। জুহি আস্তে আস্তে রোদের পাশে।

-‌এই যে ভাইয়া উঠেন নিচে সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে।

কয়েকবার ডাকার পর রোদ চোখ খুলে। চোখের সামনে জুহি কে চমকে উঠে।

-কি হলো এভাবে বড় বড় চোখ করে কি দেখছেন?

-কিছু না। কেন এসেছিস? (রোদের রাতের কথা মনে পড়ে যায়। তাই সে চোখ ফিরিয়ে নেয়)

-আপনাকে নাস্তা করার জন্য ডাকতে।

-শুভ্র কে ডাকিস নি। (দাঁতে দাঁত চেপে) অভিমানি ভালোবাসা

-ডেকেছি তো।

রোদের আরো রাগ উঠে যায়। আর অন্যদিকে জুহি খেয়াল করে রোদের চোখ মুখ ফুলে আছে। আর চোখ গুলা লাল হয়ে গেছে।

অভিমানি ভালোবাসা

-এই ভাইয়া আপনি কি রাতে ঘুমান নি? মনে হচ্ছে রাতে কান্না করছেন! চোখ গুলা লাল হয়ে আছে। তা ভাইয়া বিয়ের জন্য কেঁদেছেন বুঝি। আচ্ছা সমস্যা নাই আমি মামনি কে বলে দিবো আপনাকে বিয়ে করানোর জন্য।হিহিহি….

সব কথা শেষ করে জুহি রোদের দিকে তাকাতেই দেখে রোদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওর কথা শুনেই রেগে গেছে। জুহি চুপ মেরে যায়।

-যেভাবে তাকিয়ে আছেন মনে হচ্ছে চোখ গুলা দিয়েই আমাকে গিলে খাবেন।

-তোর কথা শেষ হলে এখন যেতে পারিস।

-আচ্ছা আপনি নাস্তা করতে আসেন। বাপরে এতো রাগ করার কি আছে।

জুহি এক দৌড়ে চলে যায়। কারণ রোদ আরো বেশি রেগে যাচ্ছে। কখন জানি মেরে ওর হাড্ডি গুড্ডি সব এক করে দেয়।

রোদ ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। চুপচাপ নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। জুহির দিকে আর তাকালোই না। কারণ রাগ উঠলে নিজেই কি করে বসবে ঠিক নেই।

রোদ অফিসে শান্তি মতো থাকতেই পারছে না। মন টা কেমন জেনো উশখুশ করছে। এই মনে হচ্ছে জুহি শুভ্রর সাথে হেসে কথা বলছে। প্রচন্ড রকমের হিংসা হয় রোদের। সাথে রাগ ও। হয়তো এটা সবার ক্ষেত্রে ই এক। নিজের ভালোবাসার মানুটি কে যদি অন্য কারো সাথে দেখা যায় কেউ ই তা মেনে নিতে পারে না।

কারণ সবাই চায় তার ভালোবাসার মানুষটি একান্তই তার নিজের হোক। সে সুখ দুঃখ হাসি কান্না দুষ্টুমি সব তার সাথেই করুক। কিন্তুু সেটা যদি সম্পূর্ণ উল্টো হয় তাহলে হিংসা রাগ অভিমান এসব হওয়া টা স্বাভাবিক।

রোদের অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। মন থেকে সব চিন্তা বাদ দিয়ে মনযোগ দিয়ে কাজ করছে রোদ। সব কাজ শেষ করে রোদ বাসায় আসে। রোদ ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোতেই দেখে কাব্য শান্ত রিমি ঝিমি শুভ্র আর জুহি সবাই এক সাথে বসে ড্রয়িংরুমে আড্ডা দিচ্ছে। রোদ ও গিয়ে ওদের সাথে বসে।

-ভাই তুই ও এসেছিস চল এবার সবাই মিলে ট্রুথ ডেয়ার খেলি।

-ওকে চলো।

অভিমানি ভালোবাসা

রোদ না করলে ও সবাই ওকে জোড় করে খেলতে বসায়। হাতে কাছে একটা কাঁচের বোতল নেয়।

-শোনো ঐ টা বোতল টা ঘুরে ঘুরে যার দিকে যাবে তাকেই ট্রুথ অর ডেয়ার ২ টা থেকে একটা চয়েস করতে হবে। আর তোমরা তো খেলার নিয়ম জানোই।

-হুম।

প্রথমে আসে শান্তর পালা। রিমি বলে উঠে।

-শান্ত বল কি নিবি?

-ট্রুথ….

-তুই যে ভিতুর ডিম সেটা আমি জানতাম ই ট্রুথ নিবি।

-দেখ রিমি একদম ইনসাল্ট করবি না।আমি মোটে ও ভিতু না। (রেগে)

-আহা রিমি থাক না। ট্রুথ ও তো খেলার ই অংশ সবাই যদি ডেয়ার নিবে তাহলে ট্রুথ কে নিবে? (জুহি)

-ওখে,,যাই হোক প্রশ্ন করছি উওর দে শান্ত। আচ্ছা ধর সমুদ্রের ঠিক মাঝখানে একটা কমলার গাছ আছে। তো তোকে সেই কমলা গাছ টার থেকে একটা কমলা পেড়ে নিয়ে আসতে হবে। তুই কিভাবে নিয়ে আসবি?

-ডানা দিয়ে উড়ে উড়ে নিয়ে আসবো।

-ডানা কি তোর শশুড় মশাই এসে তোর পিঠে সুপারগ্লু দিয়ে লাগিয়ে দিবে?

-সমুদ্রের মাঝখানে কমলা গাছ কি তোর জামাই লাগিয়ে দিয়ে আসবে? অভিমানি ভালোবাসা

-আরে আমি তো প্রশ্ন করছি!

-আমি ও উওর দিলাম।

এরকম রিমি আর শান্তর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয় কারো শশুড় তো কারো জামাই। অবস্থা নাজেহাল।

-হয়েছে শান্ত আর রিমি এবার কথা অফ করো।

-কথা আমি বলছি নাকি জুহি আপু বলো তো? ঐ বাচাল মেয়ে টা ই না বলছে।

-তুই বাচাল। (রেগে)

-ওহো তোরা থামবি প্লিজ।

-আচ্ছা থেমে গেলাম হুহ।

-হুহ ২…..

এভাবে খেলতে খেলতে শুভ্রর পালা আসে। জুহি শুভ্র কে বলে।

-ভাইয়া বলো কি নিবে? আমি জানি তুমি অনেক সাহসী সো ট্রুথ তো নিবে না।

-আচ্ছা ডেয়ার নিলাম।

-এইইইই জুহি আপু তুমি থামো। আমি শুভ্র ভাইয়া কে বলবো উনি কি করে দেখাবে।প্লিজ আপু প্লিজ। (কাব্য)

-আচ্ছা কাব্য তুমি ই বলো।

-শুভ্র ভাইয়া তুমি জুহি আপু কে প্রপোজ করো।

-কিহ…….!

অভিমানি ভালোবাসা

রোদ ছাড়া সবাই কাব্যের কথা শুনে অবাক। রোদ তো কাব্যের উপর রেগে গেছে। এসবের কোনো মানেই হয় না।তাই রোদ বলে উঠে।

-এসব কি কাব্য? (রেগে)

-খেলা ই তো ভাইয়া। দেখি না শুভ্র ভাইয়া কেমন সাহস।

-আচ্ছা রোদ ভাইয়া তুমি কেন এমন করছো বলো তো। (ঝিমি)

রোদ আর কিছুই বললো না।

-শুভ্র ভাইয়া দেখি তো তোমার কত্তো সাহস? (রিমি)

-আচ্ছা দেখ। বাট কি দিয়ে প্রপোজ করবো রে কাব্য?

-ওয়েট….

কাব্য দৌড়ে গিয়ে নাস্তার টেবিল থেকে একটা কাটা চামচ নিয়ে আসে। তারপর এটা শুভ্রর হাতে দেয়।

-এই নাও ভাইয়া এটা দিয়ে প্রপোজ করো।

-ফুল বাদ দিয়ে শেষে কিনা কাটা চামচ…?

সবাই হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। কাব্যর কান্ড দেখে। রোদ ও জোড় করেই হাসছে। ভিতরে ভিতরে রেগে আগুন। অভিমানি ভালোবাসা

শুভ্র ও জুহি কে প্রপোজ করে আর জুহি ও তা হেসে হেসেই এক্সেপ্ট করে এটা দেখে রোদ জ্বলে যাচ্ছে। নাহ এখানে আর বেশি সময় থাকা যাবে না। রোদ উঠে চলে যায়।

-কিরে রোদ কোথায় যাচ্ছিস? খেলবি না?

-ভালো লাগছে না আমার।

রোদ নিজের রুমে পায়চারী করছে। একটা কিছু করতেই হবে। নিজের চোখের সামনে জুহি কে শুভ্রর সাথে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না এসব।

রোদ চলে আসায় ওরা ও আর খেলে নি। যে যার রুমে চলে যায়। কেউ ফোনে চ্যাটিং করছে কেউ বা গেমিং করছে কেউ বা ফোনে কথা বলছে। জুহি কে রোদ তার রুমের সামনে দিয়ে যেতে দেখেই রোদ জুহি কে ডাক দেয়।

-জুহি…..

-হ্যাঁ ভাইয়া। বলেন।

-আয় আমার সাথে।

-কোথায়?

-ছাঁদে।

-এখন ছাঁদে?

-হুম চল।

-আচ্ছা চলেন।

রোদ আর জুহি ছাঁদে যায়। রোদ খুব শান্ত ভাবেই জুহি কে বলে।

-দেখ জুহি তুই শুভ্রর সাথে মিশবি না। ওর সাথে তেমন কথা বলবি না। দূরে দূরে থাকবি।

-কেন?(অবাক হয়ে)

-আমার ভালো লাগে না তাই।

-আপনার কি ভালো লাগে কি লাগে না সেটা জেনে আমার তো কোনো কাজ নেই। সো সরি। আপনার কথা আমি রাখতে পারলাম না।

অভিমানি ভালোবাসা

-জুহি…..(রোদ জুহির কথায় ভীষণ রেগে যায়। রেগে গিয়ে জুহির হাত দুটো পিছনে চেঁপে ধরে)

-আহ ভাইয়া ছাড়ো প্লিজ আমার হাতে লাগছে। (কাঁদো কাঁদো হয়ে)

-লাগুক। তোর শুভ্রর সাথে কিসের কথা? ওর হাতে খাবি আমার হাতে খাবি না। ওর সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলবি আর আমার সাথে বলবি না। কি সমস্যা হ্যাঁ? তুই বুঝিস না তোকে শুভ্রর সাথে এসব করতে দেখলে আমার জ্বলে যে? বুঝিস না তুই?

-মনে আছে আপনার? ছোট বেলায় যখন আমি আপনাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে নিষেধ করতাম তখন আপনি কি করতেন? আমাকে বকা দিতেন! আমাকে নানা ভাবে অপমান করে আরো বেশি কথা বলতেন! একদিন তো একটা মেয়ের সামনে আমাকে থাপ্পড় দিলেন। কই তখন তো আপনার জ্বলে নি?! সেই সময় তো আপনি আমার কথা শুনেন নি! তাহলে আজকে আমি কেন আপনার কথা শুনবো…? আপনি যা যা আমার সাথে করেছেন তা যদি এখন আমি আপনার সাথে করি? কেমন লাগবে ভেবে দেখেছিলেন কখনো? অভিমানি ভালোবাসা

রোদ জুহির কথায় নিশ্চুপ হয়ে যায়।জুহি রোদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে যায়……..

রোদ জুহির কথায় নিশ্চুপ হয়ে যায়।জুহি রোদের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে যায়।

শুভ্র ছাঁদে আসে…..

-কিরে রোদ জুহির কি হয়েছে? কান্না করছে কেন?

(শুভ্র)

-কিছু না। (রোদ)

রোদ কিছু না বলে ছাঁদ থেকে নেমে যায়। রোদের প্রচন্ড অনুতপ্ত বোধ হয়। জুহির সাথে এমন ব্যবহার করা তার সত্যি ই ঠিক হয়। আর জুহি ই বা তার কথা শুনবে কেন? সে তো জুহির কথা আগে শুনতো না। বরং আরো নানা ভাবে জুহি কে বকা দিতো অপমান করতো। বলতে গেলে তখন জুহির সাথে এসব করতে রোদের মজা লাগতো আর সেই মজার ফল এখন রোদ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

ডিনার শেষে জুহি ওর রুমের দিকে যাচ্ছিলো এমন সময়।

-জুহি…..(রোদ)

-নো রেসপন্স….(জুহি)

-জুহি আ’ম সরি। (রোদ)

-নো রেসপন্স…(জুহি)

অভিমানি ভালোবাসা

জুহি রোদ কে পাওা না দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। রোদ ও মন খারাপ করে নিজের রুমে চলে যায়। অদ্ভুত বিষয় রোদের চোখের ঘুম উড়ে গেছে। কিছু তেই ঘুম আসছে না। রাত টা এপাশ ওপাশ করতে করতেই কেটে গেছে।

সকালে নাস্তা সেরে রোদ অফিসে চলে যায়। আজকে একটা মিটিং আছে তার। রাতে ঘুম না হওয়ার ফলে এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। কিন্তুু মিটিং টা খুব ইনফর্টেন্ট যেভাবেই হোক করতেই হবে।

মিটিং টা কমপ্লিড করে রোদ ম্যানেজার কে তার রুমে ডাকে।

-ম্যানেজার সাহেব আপনি এদিকে টা সামলে নিন আমার এখন বাসায় যেতে হবে। (রোদ)

-আচ্ছা স্যার। (ম্যানেজারল

-পারবেন তো? (রোদ)

-হ্যাঁ স্যার। (ম্যানেজার)

আর এদিকে জুহি একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন পায়। কথা বলার পর বুঝতে পারে ঐ দিনের সেই লোক গুলো। কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য ওরা জুহি কে রেস্টুরেন্টে ডেকেছে। তাই জুহি গাড়ি করে বেরিয়ে গেছে সকাল সকাল।

অভিমানি ভালোবাসা

রোদ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে। হঠাৎ সে রেস্টুরেন্টে জুহির মতো কাউকে দেখতে পায়। পরে ভাবে জুহি কেন এখানে আসতে যাবে? এটা হয়তো বা তার মনের ভুল। সেদিকে আর মন টা দিয়ে বাসায় চলে আসে রোদ।

-আম্মু জুহি কোথায়? (রোদ)

-কেন বলতো? (আম্মু)

-না মানে এমনি আর কি। (রোদ)

-জুহি তো ওর রুমে। (জুহি)

-ওহ আচ্ছা। (রোদ)

রোদ আর কিছু বললো না। মনে মনে ভাবলো সত্যি রেস্টুরেন্টে যাকে সে জুহি ভেবেছে সেটা আসলেই তার মনের ভুল।

রোদ আর সাতপাঁচ না ভেবে জম্পেশ একটা ঘুম দেয়। এক ঘুমে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। রোদের ঘুম ভাঙ্গলে ফোনে টাইম দেখে সে থ হয়ে যায়। এতোসময় সে ঘুমিয়েছে। অবাক করা বিষয়। কেউ একবার ডাকলো ও না।

-আম্মু ও আম্মু কোথায় তোমরা…? (রোদ)

-আরে এই তো কেন ডাকছিস? (আম্মু)

-তোমরা আমাকে একবার ও ডাকলে না কেন? (রোদ)

-ডাকি নি মানে? তুই জানিস কতোবার ডেকেছি কিন্তুু তোর তো কোনো সাড়াশব্দ ই পেলাম না। (আম্মু)

-ওহ। (রোদ)

-নাস্তা করতে আয়। (আম্মু)

অভিমানি ভালোবাসা

-এই তো আসছি। (রোদ)

সবাই মিলে একসাথে নাস্তা সেরে নেয়। জুহি একবারের জন্যও রোদের সাথে কথা বলে নি। বিষয় টা রোদের ভালো লাগছে না।

রোদ জুহি কে পুরো বাসা খুঁজে কোথাও না পেয়ে ছাঁদে যায়। রোদ দেখে জুহি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে একা একা।

রোদ ও জুহির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে জুহি সেদিকে তাকায়। দেখে রোদ এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

জুহি চলে যেতে নিলে রোদ ওকে আটকায়।

-দেখ জুহি আমি সরি বললাম তো। প্লিজ তুই আমার সাথে রাগ করে থাকিস না। তুই এভাবে রোবটের মতো হয়ে আছিস এটা আমার ভালো লাগছে না রে। (রোদ)

-নো রেসপন্স। (জুহি)

-কিছু তো বল জুহি। (রোদ)

-নো রেসপন্স। (জুহি)

রোদের কোনো কথা জেনো জুহির কান ওবধি পৌঁছাচ্ছে না। সে চুপ করে আছে। অভিমানি ভালোবাসা

-ওকে তুই আমার সাথে কথা বলবি না তো দেখ আমি নিজের কি অবস্থা করি। (রোদ)

রোদ পকেট থেকে ব্লেড বের করে হাতে কয়েকটা টান মারে। সাথে সাথে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে।

এটা দেখে জুহির কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে। রোদের থেকে ব্লেড টা কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়।

-কি করলেন এটা আপনি হ্যাঁ। পাগল হয়ে গেছেন নাকি? (জুহি)

-তোকে যে কষ্ট দিয়েছি সেই কষ্টের থেকে এগুলা কিছুই না। (রোদ)

জুহি দৌড়ে নিচে গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স টা নিয়ে আসে। এখনো রক্ত পড়ছে। কোনো ভাবে রক্ত বন্ধ করে রোদের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় জুহি। জুহি কান্না করছে আর সেটা রোদ দেখে নেয়।রোদ জুহির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

-কিরে তুই কান্না করছিস কেন? (রোদ)

-আর একবার এসব উল্টা পাল্টা কাজ করবেন তো আমি এই বাড়ি ছেড়ে আবার দেশের বাহিরে চলে যাবো। ধুর আমার আসলে এখানে আসাই ঠিক হয় নি।

(জুহি)

রাগে দুঃখে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে জুহির। কিভাবে পারলো সে রোদ কে এটা করতে দিতে?

অভিমানি ভালোবাসা

জুহি নিচে চলে যায়। রোদ ও কিছুক্ষণ পর চলে যায়। ডিনার শেষে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছে তখন রোদ চুপিচুপি জুহির রুমে যায়। আর দেঝে জুহি গুটিসুটি মেরে ঘুমোচ্ছে। জুহির ঘুমন্ত চেহারা মুগ্ধ হয়ে দেখছে রোদ।

রোদ আস্তে আস্তে জুহির পাশে গিয়ে বসে। কেমন জেনো ঘোর লেগে গেছে তার। ইচ্ছে করছে জুহির কপালে তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে। যেই ভাবা সেই রোদ আস্তে করে জুহির কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। কিছু টা কেঁপে উঠলো জুহি।

হঠাৎ করে জুহির ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর দেখতে পায় রোদ তার খুব কাছে। খুব রেগে যায় জুহি। রোদ কে একটা ধাক্কা মেরে সরিয়ে উঠে বসে জুহি। রোদ তাল সামলাতে না পড়ে যেতেই যেতেই উঠে দাঁড়ায়।

-ছিঃ ভাইয়া আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন? এতো টা নিচে নেমে যাবেন আমি ভাবতে ও পারি নি। ঘৃণা হচ্ছে আমার। এতো টা জঘন্য আপনি। ছিঃ….(জুহি)

-জুহি আমার কথা টা তো শোন…..(রোদ) অভিমানি ভালোবাসা

-আমার রুম থেকে চলে যান এক্ষুনি। (জুহি)

-জুহি…..(রোদ)

-যদি আমার খারাপ দেখতে না চান তো চলে যান…. যেতে বলছি না আপনাকে শুনতে পারছেন না আপনি? (জুহি, চেঁচিয়ে)

রোদ ও রেগে যায়। জুহির হাত বেডের সাথে চেপে ধরে।

-তোর সাথে আমি খারাপ কিছুই করতে আসি নি। জাস্ট তোকে একটু দেখতে এসেছি। তাই বলে তুই আমাকে এগুলো বললি? খারাপ কিছু করার থাকলে তোকে এসব বলার সুযোগ ই দিতাম না। (রোদ)

রোদ কিছু না বলে জুহির হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।জুহি তার সাথে এতোটা মিসবিহেভ করবে সে ভাবতে ও পারে নি। রোদ বুঝতে পারলো তার হয়তো এই কাজ টা ঠিক হয় নি…. কিন্তুু জুহি কিভাবে তাকে এতো বাজে ভাবতে পারলো…?

জুহি বুঝতে চেষ্টা করলো কি ছিলো এটা? রোদ কি করতে যাচ্ছিলো তার সাথে? হঠাৎ করে ঘুম ভাঙ্গার ফলে জুহির সেন্স ঠিক ছিলো না। জুহি নিজের ভুল বুঝতে পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। রোদ কি ভাবলো তাকে..?

অভিমানি ভালোবাসা

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে জুহি আবার ঘুমিয়ে পড়লো সে নিজে ও জানে না। অন্যদিকে রোদ তার রুমে গিয়ে দেওয়ালে একটা ঘুষি মারে।

-এতো টা বাজে চিন্তা ভাবনা আমাকে নিয়ে জুহির ছিঃ…….(রোদ)

সকালে জুহি ঘুম থেকে উঠে। রাতের বিষয় টা মনে পড়ে যায়। যেভাবেই‌ হোক রোদ কে সরি বলা প্রয়োজন। জুহি নিচে এসে জানতে পারে রোদ অনেক আগেই অফিসে চলে গেছে।এতো তাড়াতাড়ি তো রোদ অফিসে যায় না। তাহলে আজকে…? হয়তো রাগ করেই এমন করছে রোদ। বুঝতে পারে জুহি। মন টা খারাপ ই হয়ে গেছে জুহির।

,

জুহি পুরো দিন অপেক্ষা করে রোদের জন্য। কখন রোদ আসবে আর কখন সে সরি বলবে এই ভেবে।

কিন্তুু রোদের আসার নাম গন্ধ ও নেই। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে রোদ।

জুহি ভাবলো এখন বলা ঠিক হবে না আগে কিছু টা রেস্ট নিক। রোদ ফ্রেশ হয়ে নেয়। অভিমানি ভালোবাসা

সন্ধ্যায় সবাই মিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

জুহি শুধু উপরে তার ঘরে ছিলো।

কিছুক্ষণ পর জুহি ড্রয়িংরুমে ওদের সাথে আড্ডা দিতে আসলেই রোদ উঠে চলে যায়।

জুহি কে কোনো পাওাই দিচ্ছে না। জুহির থেকে দূরে দূরে থাকছে রোদ। যেখানে জুহি আছে সেখান থেকে সে চলে আসে।

জুহি রোদ কে তার কথা টা বলতেই পারছে না। কোনো চান্স ই দিচ্ছে না রোদ তাকে। রোদ জুহি কে বার বার ইগনোর করছে যেটা জুহির বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে।

আর সহ্য করতে পারলো না জুহি‌…..

জুহি রোদ কে কোথাও না দেখে ওর রুমে যায়। রোদ জুহি কে দেখতে পেয়ে……

-তুই কেন এসেছিস আমার রুমে? (রোদ)

-আসলে আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া…. আমি আসলে বুঝতে পারি নি…. তাই… (জুহি)

-তুই আমার রুম থেকে চলে যা নয়তো আমি ই চলে যাবো! (রোদ)

-আমি তো বলছি আমার ভুল হয়েছে। (জুহি)

রোদ রাগ করে নিজের রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে চলে যায়। জুহির এবার খুব খারাপ লাগলো। সে নাহয় রাতে ঘুমের ঘোরে উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে তাই বলে এমন করতে হবে…?

অভিমানি ভালোবাসা

জুহি ডিনার না করেই শুয়ে পড়ে। রোদের আম্মু জুহি কে ডাকতে আসলে বলে সে খাবে ক্ষুধা নেই। রোদের আম্মু জোড় করে ও কোনো লাভ হলো না। জুহির এক কথা সে খাবে না।

রোদ ভালোই বুঝতে পারছে জিত করে জুহি ডিনার করছে না। না করুক তাতে রোদের কি হুহ….

পরের দিন ও যথারীতি নাস্তা সেরে নেয় রোদ। গায়ে ব্লেজার টা জড়িয়ে নেয় সে। এমন সময় জুহির আগমন।

-আবার কেন এসেছিস তুই? (রোদ)

-এতো রাগ করছেন কেন আপনি? আমি বললাম তো সরি। ঘুমের ঘোরে আমি কি উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছি। (জুহি)

চোখ মুখ লাল হয়ে আছে রোদের। রোদ জুহির কথা শুনে আরো রেগে গিয়ে জুহি কে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।

-শোন তোর এসব শুনার মতো আমার টাইম নাই। তুই আমাকে কিভাবে এতো টা নিচু স্থানে বসিয়ে দিতে পারলি। ছিঃ তোর মুখ ও দেখার ইচ্ছা নাই আমার। আর কখনো আমার সামনে ও আসবি না। অভিমানি ভালোবাসা

রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায় জুহি। খুব কান্না পাচ্ছে তার। নিজেকে সামলাতে না পেরে ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয় সে।

প্রায় অনেক্ষন কান্না করে জুহি। ফলে চোখ লাল হয়ে ফুলে গেছে। রোদ যখন আর তার মুখ ও দেখতে চাচ্ছে না তাহলে সে ওই বাড়িতে থেকে লাভ কি? জুহি ঠিক করে সে তার ফুফির বাসায় চলে যাবে।

জুহি ওয়াশরুমে গিয়ে ভালোভাবে মুখ টা ধুয়ে নেয়। যাতে কেউ বুঝতে না পারে সে কান্না করেছে। তারপর সব কিছু গুছিয়ে রেডি হয়ে নেয় সে।

-কিরে জুহি এই সকাল বেলায় কোথায় যাচ্ছিস তুই? তাও আবার নাস্তা না করেই? কি হয়েছে তোর জুহি? কোনো সমস্যা। (রোদের আম্মু)

-না মামনি কোনো সমস্যা না। আমার এমনি ভালো লাগছে না। ফুফুনি ফোন দিয়েছিলো তোমাকে তো কয়দিন আগেই বললাম। আজ আবার বললো তাই ভাবলাম গিয়ে ঘুরে আসি। (জুহি)

-তাই বলে নাস্তা না করে কোথায় যাচ্ছিস? (রোদের আম্মু)

-না মামনি আমি নাস্তা পরে করে নিবো। এক্ষুনি বের হতে হবে আমাকে প্লিজ। (জুহি)

অভিমানি ভালোবাসা

-রাতে ও না খেয়ে ঘুনিয়েছিস আবার এখনো নাস্তা করছিস না। মানে কি এসবের জুহি? এভাবে না খেয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবো তুই এটা বুঝিস না! (রোদের আম্মু)

-ওহহো মামনি বললাম তো আমি যাওয়া আগে রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাস্তা করে নিবো এখন আসি কেমন। টাটা। (জুহি)

-তোকে আর কি বলবো। সত্যি করে বল নাস্তা করে নিবি তো? (রোদের আম্মু)

-হু একদম সত্যি। এখন যাই। (জুহি)

-সাবধানে যাস। (রোদের আম্মু)

-ওকে। (জুহি)

বেশ হাসিখুশি ভাবেই রোদের আম্মুর থেকে বিদায় নেয়ার জুহি। উনাকে বুঝতেই দিলো না আসলে ঠিক কি হয়েছে? জুহি গাড়ি ড্রাইভার কে কিছু টা পথ যাওয়ার পর বললো।

-ড্রাইভার আংকেল থামুন আমি এখানেই‌ নামবো। (জুহি) অভিমানি ভালোবাসা

-আরো তো অনেক টা পথ বাকি।

-থাক আমি যেতে পারবো। (জুহি)

-কি বলছেন আপনি ম্যাম সাহেব যদি জানতে পারে আমি আপনাকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিয়েছি তাহলে আমাকে জব থেকেই বের করে দেবেন।

-আরে না কিছু করবেন না। আমি বলছি তো। (জুহি)

-কিন্তুু…….

-কোনো কিন্তুু নয়। (জুহি)

এভাবে অনেকক্ষণ পর ড্রাইভার টাকে কোনো ভাবে বুঝ দিয়ে পাঠিয়ে দেয় জুহি। গাড়ি তে তার ভালোই লাগছে না। হেটে হেটে বেশ লাগছে।

রোদের সেই কথা গুলো ভাবছে জুহি। কিছুই জেনো ভালো লাগছে না। রোদের কথা মতো তো তার মুখ আর রোদ দেখতে পাবে না তবে কি রোদ খুশি হবে? এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকায় জুহি।

একটা গাড়ি এসে সজোরে রাস্তার পাশে থাকা ফুচকা বিক্রেতার ঠেলা গাড়ি কে ধাক্কা দেয়। ফলে সব জিনিস মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গাড়ি থেকে একজন লোক নেমে আসে।

লোকটার দোষেই এমন হয়েছে। সে ফুচকা ওয়ালা কে সরি না বলে উল্টো মারতে আসছে। ততক্ষণে রাস্তায় অনেক লোক জমা হয়ে গেছে।

-ছোট লোকের বাচ্চা তোর জন্য আজকে আমার গাড়ির কতো টা ক্ষতি হয়েছে তুই জানিস??…… (জিসান)

এ কথাটি বলে গাড়ি থেকে নেমে আসা লোকটি ফুচকা ওয়ালা কে মারতে রেগে তেড়ে আসে।

অভিমানি ভালোবাসা

ফুচকা ওয়ালার গায়ে হাত দিতে যাবে জুহি লোকটার হাত ধরে ছিটকে ফেলেন দেয়।

লোকটার ই দোষ। সে উল্টা বিনা দোষে ফুচকা ওয়ালার গায়ে হাত দিবে। এটা দেখে জুহি রেগে গিয়েছে।

-দোষ টা উনার নয় আপনার। গাড়ি চালাতে না পারলে রাস্তায় নামেন কেন? নাকি চোখ হাতে নিয়ে গাড়ি চালান। কতো টাকার মালিক আপনি যার জন্য লোকটা কে ছোট লোক বলছেন? কিসের এতো অহংকার? সামান্য আল্লাহর সৃষ্টি জীব হয়ে উনাকে আপনি ছোট লোক বলছেন তাহলে আপনি কি?।। আপনার গাড়ির ধাক্কায় ক্ষতি আপনার নয় উনার হয়েছে। আপনি ধন সম্পদের মালিক তাই আপনার কাছে হয়তো দু চার টাকার কোনো মূল্য নেই কিন্তুু এই মানুষটা যে সারাদিন এই কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি করে যাচ্ছে! তার কাছে এই দু চার টাকার মূল্য দু চার লক্ষ কোটি টাকার থেকে ও বেশি মূল্যবান। দিন উনার ক্ষতিপূরণ দিন। (জুহি)

গাড়ি তে থাকা লোকটির নাম জিসান। সে ও একজন বিজনেসম্যান। জিসান হা করে জুহির দিকে তাকিয়ে আছে। জুহির কোনো কথাই জেনো তার কান ওবধি পৌঁছাচ্ছে না।

সে তো জুহির রাগি লুক কাঁপা কাঁপা ঠোঁট রেগে লাল হয়ে কথা বলা এসব দেখে পাগল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের জন্য জিসান অন্য কোনো এক রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। যেই রাজ্য জুড়ে শুধু জুহির প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান।

-ও হ্যালো আপনাকে কিছু বলছি আমি এভাবে হা করে আছেন কেন? (জুহি)

-হ্যাঁ কিকিকি হয়েছে। (জিসান)

-আপনি উনার অনেক ক্ষতি করেছেন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এখন আপনাকে। (জুহি)

জিসান অনেক গুলা টাকা বের করে লোকটির হাতে ধরিয়ে দেয়। কিন্তুু লোকটি তার উপযুক্ত টাকা নিয়ে বললো…

-দেখো বাবা আমরা গরীব কিন্তুু লোভী নই।

জুহি ফুচকা ওয়ালা কে জিঙ্গেস করে…

-মামা আপনার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তো? (জুহি)

-হ্যাঁ মা।

জুহি বাকি টাকা গুলো জিসানের হাতে ধরিয়ে দেয়।

-আশা করি নেক্সট টাইম আর এমন কিছু করবেন না। (জুহি) অভিমানি ভালোবাসা

-হুম। (জিসান)

আস্তে আস্তে সবাই চলে যায়। জিসান এখনো অবাক দৃষ্টিতে জুহি কে দেখছে। মুগ্ধ হয়ে গেছে জিসান। অন্য সময় হলে জিসান বুঝিয়ে দিতো তাকে অপমান করার মানে কি।

কিন্তুু এবার ঠিক তার উল্টো। জুহির মাথাটা কেমন ঝিম ধরে এসেছে। হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেয় জুহি কিন্তুু তার সামনে থাকা লোকটি তাকে ধরে নেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই জুহির। কারণ সে সেন্সলেচ হয়ে গেছে..

1 thought on “অভিমানি ভালোবাসা Part 2”

Leave a Comment

Verified by MonsterInsights